০২:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও একটি আয়নাঘর- ফোরকান মাহমুদ

  • প্রবাস বাংলা
  • আপডেট সময় : ০১:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪
  • ৪১ ভিউ

আমার কলাম:

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে রাতে কিছু সাদা পোশাকের লোক আসে ব্যারিস্টার আরমার এর বাসায়।

দীর্ঘ কথোপকথনের পর বলছে, আপনাকে যেতে হবে আমাদের সাথে, প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে যেতে বাধ্যহন ব্যারিস্টার আরমান।
বাহির হয়ে গাড়িতে তুলতেই বেঁধে পেলা হয় মূখ আর হাত।

এরপর থেকে দীর্ঘ ৮ টি বছর, অন্ধকার প্রকোষ্ঠে- সেই আয়নাঘরে।

তিনি NTV তে দিয়েছেন ৬মিনিটের এক সাক্ষাৎকার।
কাঁদতে কাঁদতে চোখের মানি শেষ হয় ব্যারিস্টার আরমানের।

যেমনটি বলেছিলেন, অধ্যাপক গোলাম আজমের ছেলে, এই গামছা দিয়ে, যে চোখের পানি মুছা হয়েছে, যদি একত্রিত করা যেতো, তাহলে একটি মহা সমুদ্র করা যেতো।

এমন বিভীষিকাময় আয়নাঘরের ৮ বছরের বর্ণনা দিলেন ব্যারিস্টার আরমান।

থাকে ধরের নিয়ে যাওয়ার পর থেকে, আটটি বছর, ছিলো কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা।
বর্ণনায় বলেন, নাকের নিচ থেকে মাথার উপর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা থাকতো চোখ বেঁধে।

কারণ হিসেবে বলেন, সেইখানে দেখার কিছু নেই। কিন্তু তার সামনে যে লোক আছে তাকেও যেন দেখতে না পান তিনি।
বাঁধা থাকত দু,হাত দিনে বেঁধে থাকতো সামনে, রাতে বাঁধা থাকতো পিছনে।

শুধু ঈদের আগের দিন, অথাৎ শেষ রাতে হাত খুঁলে দেওয়া হতো।
শেষ রোজার নামাজটা আদায় করার জন্য।
রাতে তার কানে অন্যরুম থেকে ভেঁসে আসতো কান্নার আওয়াজ। অনেকে কান্না করতো শিশুর মতো।
বিভীষিকাময় এমন জীবনকে ত্যাগ করতে, অনেকে চেয়েছেন আত্মহত্যা করতে।
কিন্তু তাদের বাঁচিয়ে রাখতে মারা হতো ইনজেকশন।
এমন মানবেতর জীবনের গল্প শুনতে হবে কখনো কল্পনাও করা হয়নি।

হ্যাঁ, তার বাবা একজন রাজনীতিবীদ, মেনে নিলাম তার বাবা অপরাধ করেছে, অপরাধ না করেও অপরাধের বুঝা মাথায় নিয়ে ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত উঠতে হয়েছে মরহুম মীর কাসেম আলীকে।

কিন্তু একজন বেরিস্টার, যিনি দেশ ও দশের সেবা করতো।

৮টি বছর সেই জানতো না কোথায় আছে, জানতো নন ঘঁড়ির সময়ে এখন টাইম কত, বলা হতো না নাজের সময়ের কথা।
বাহির থেকে শুনা যেতো আজানের শব্দ, কিন্তু বুঝা যেতো না এখন কোন সময়ের আজান দিচ্ছে।
আজানের সময় মিউজিক বাজিয়ে দেওয়া হতো উচ্চস্বরে় যেন আজান কারো কানে না আসে,
এটাই ছিলো বাহিরের মাফিয়াদের ভিতরের নির্দেশ।
এমন বিভীষিকাময় ৮ বছরের বর্ণনানা দিয়েছেন আরমান।

ঘন্টা, দিন রাতের হিসাব না থাকা আরমান কখনো চিন্ত করেনি, হয়তো আর পৃথিবীর আলো বাতাস দেখবে।
সেখানে বসেই চিন্তা করতো হয়ত চৈরশাসকরের পতন হলে তাদের মেরে পেলে দেবে এমনটাই বিশ্বাস করতেন ব্যারিস্টার আরমান।

সর্বশেষ, যেইদিন থাকে বাহিরে এসে পেলে দেওয়া হয়েছিল, গভীররাতে সেই আয়নাঘর থেকে বাহির করা মুহুর্তেও এমন মৃত্যুর চিন্তা ছিলো আরমানের। সেই জানতো না দেশ স্বাধীন হয়েছে।

একটি খালি মাটে চোখ বন্ধ অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয় আরমানকে। তিনি তখনো বুঝে উঠতে পারেনি। তিনি ভাবছেন হয়ত এখন গুলি করা হচ্ছে থাকে। কিন্ত না পরোক্ষণে গাড়ি চলে গেলো।

কিছুক্ষণের মধ্য চোখ থেকে কালো কাপড় খুলতে সক্ষম হন আরমান।
দেখতে পেলেন ৮বছর পর একটি খালি মাট। সেখান থেকে ঘুরতে ঘুরমে কোনো অজ্ঞাত স্থানে এসে জানতে পারে যে, তিনি এখন ডিয়াবাড়ীতে আছেন।
হয়তো আরেকটি নতুন জীবন ফিরে পেলেন তিনি কিন্তু তার থেকে হারিয়ে যাওয়া তার স্ত্রী ছেলে সন্তান থেকে হারিয়ে যাওয়া ৮টি বছর কে ফিরিয়ে দেবে আপনি আমি বলতে পারব।

-এমনএকটা জায়গায় রাজনীতির উর্ধে উঠে আপনি আর আমি একবার দাঁড়ায়।
এরপর পরিবার, ছেলে সন্তান, দেশ সমাজ নিয়ে একবার চিন্তা করি।

আপনি যদি সুশীল হন, আপনি যদি মানুষ হন, আপনার কাছে যদি বিন্দুমাত্র বিবেকবোধ থাকে হয়ত আপনি এমন একটা সময়কে, এমন একটা সময়ের দেশ পরিচালককে ঘৃনার পাত্রে রাখবেন।

আমরা কি, গুম, খুন, ঘুষ, দূর্নীতি, বৈষম্য, সর্বপরি আয়নাঘর আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা চেয়েছিলাম।

মহান, আল্লাহ’র কাছে চাওয়া এমন বিভীষিকাময় অন্ধকার যেনো কারো জীবনে নেমে না আসেন।

আমার কলাম-
ফোরকান মাহমুদ সাংবাদিক ও সংগঠক

আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও একটি আয়নাঘর- ফোরকান মাহমুদ

আপডেট সময় : ০১:০৬:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

আমার কলাম:

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে রাতে কিছু সাদা পোশাকের লোক আসে ব্যারিস্টার আরমার এর বাসায়।

দীর্ঘ কথোপকথনের পর বলছে, আপনাকে যেতে হবে আমাদের সাথে, প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে যেতে বাধ্যহন ব্যারিস্টার আরমান।
বাহির হয়ে গাড়িতে তুলতেই বেঁধে পেলা হয় মূখ আর হাত।

এরপর থেকে দীর্ঘ ৮ টি বছর, অন্ধকার প্রকোষ্ঠে- সেই আয়নাঘরে।

তিনি NTV তে দিয়েছেন ৬মিনিটের এক সাক্ষাৎকার।
কাঁদতে কাঁদতে চোখের মানি শেষ হয় ব্যারিস্টার আরমানের।

যেমনটি বলেছিলেন, অধ্যাপক গোলাম আজমের ছেলে, এই গামছা দিয়ে, যে চোখের পানি মুছা হয়েছে, যদি একত্রিত করা যেতো, তাহলে একটি মহা সমুদ্র করা যেতো।

এমন বিভীষিকাময় আয়নাঘরের ৮ বছরের বর্ণনা দিলেন ব্যারিস্টার আরমান।

থাকে ধরের নিয়ে যাওয়ার পর থেকে, আটটি বছর, ছিলো কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা।
বর্ণনায় বলেন, নাকের নিচ থেকে মাথার উপর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা থাকতো চোখ বেঁধে।

কারণ হিসেবে বলেন, সেইখানে দেখার কিছু নেই। কিন্তু তার সামনে যে লোক আছে তাকেও যেন দেখতে না পান তিনি।
বাঁধা থাকত দু,হাত দিনে বেঁধে থাকতো সামনে, রাতে বাঁধা থাকতো পিছনে।

শুধু ঈদের আগের দিন, অথাৎ শেষ রাতে হাত খুঁলে দেওয়া হতো।
শেষ রোজার নামাজটা আদায় করার জন্য।
রাতে তার কানে অন্যরুম থেকে ভেঁসে আসতো কান্নার আওয়াজ। অনেকে কান্না করতো শিশুর মতো।
বিভীষিকাময় এমন জীবনকে ত্যাগ করতে, অনেকে চেয়েছেন আত্মহত্যা করতে।
কিন্তু তাদের বাঁচিয়ে রাখতে মারা হতো ইনজেকশন।
এমন মানবেতর জীবনের গল্প শুনতে হবে কখনো কল্পনাও করা হয়নি।

হ্যাঁ, তার বাবা একজন রাজনীতিবীদ, মেনে নিলাম তার বাবা অপরাধ করেছে, অপরাধ না করেও অপরাধের বুঝা মাথায় নিয়ে ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত উঠতে হয়েছে মরহুম মীর কাসেম আলীকে।

কিন্তু একজন বেরিস্টার, যিনি দেশ ও দশের সেবা করতো।

৮টি বছর সেই জানতো না কোথায় আছে, জানতো নন ঘঁড়ির সময়ে এখন টাইম কত, বলা হতো না নাজের সময়ের কথা।
বাহির থেকে শুনা যেতো আজানের শব্দ, কিন্তু বুঝা যেতো না এখন কোন সময়ের আজান দিচ্ছে।
আজানের সময় মিউজিক বাজিয়ে দেওয়া হতো উচ্চস্বরে় যেন আজান কারো কানে না আসে,
এটাই ছিলো বাহিরের মাফিয়াদের ভিতরের নির্দেশ।
এমন বিভীষিকাময় ৮ বছরের বর্ণনানা দিয়েছেন আরমান।

ঘন্টা, দিন রাতের হিসাব না থাকা আরমান কখনো চিন্ত করেনি, হয়তো আর পৃথিবীর আলো বাতাস দেখবে।
সেখানে বসেই চিন্তা করতো হয়ত চৈরশাসকরের পতন হলে তাদের মেরে পেলে দেবে এমনটাই বিশ্বাস করতেন ব্যারিস্টার আরমান।

সর্বশেষ, যেইদিন থাকে বাহিরে এসে পেলে দেওয়া হয়েছিল, গভীররাতে সেই আয়নাঘর থেকে বাহির করা মুহুর্তেও এমন মৃত্যুর চিন্তা ছিলো আরমানের। সেই জানতো না দেশ স্বাধীন হয়েছে।

একটি খালি মাটে চোখ বন্ধ অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয় আরমানকে। তিনি তখনো বুঝে উঠতে পারেনি। তিনি ভাবছেন হয়ত এখন গুলি করা হচ্ছে থাকে। কিন্ত না পরোক্ষণে গাড়ি চলে গেলো।

কিছুক্ষণের মধ্য চোখ থেকে কালো কাপড় খুলতে সক্ষম হন আরমান।
দেখতে পেলেন ৮বছর পর একটি খালি মাট। সেখান থেকে ঘুরতে ঘুরমে কোনো অজ্ঞাত স্থানে এসে জানতে পারে যে, তিনি এখন ডিয়াবাড়ীতে আছেন।
হয়তো আরেকটি নতুন জীবন ফিরে পেলেন তিনি কিন্তু তার থেকে হারিয়ে যাওয়া তার স্ত্রী ছেলে সন্তান থেকে হারিয়ে যাওয়া ৮টি বছর কে ফিরিয়ে দেবে আপনি আমি বলতে পারব।

-এমনএকটা জায়গায় রাজনীতির উর্ধে উঠে আপনি আর আমি একবার দাঁড়ায়।
এরপর পরিবার, ছেলে সন্তান, দেশ সমাজ নিয়ে একবার চিন্তা করি।

আপনি যদি সুশীল হন, আপনি যদি মানুষ হন, আপনার কাছে যদি বিন্দুমাত্র বিবেকবোধ থাকে হয়ত আপনি এমন একটা সময়কে, এমন একটা সময়ের দেশ পরিচালককে ঘৃনার পাত্রে রাখবেন।

আমরা কি, গুম, খুন, ঘুষ, দূর্নীতি, বৈষম্য, সর্বপরি আয়নাঘর আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা চেয়েছিলাম।

মহান, আল্লাহ’র কাছে চাওয়া এমন বিভীষিকাময় অন্ধকার যেনো কারো জীবনে নেমে না আসেন।

আমার কলাম-
ফোরকান মাহমুদ সাংবাদিক ও সংগঠক