ওমানে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের সাথে সোশ্যাল ক্লাবের সাক্ষাৎ, সোশ্যাল ক্লাবকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত।
ওমানস্থ সোশ্যাল ক্লাবের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সিআইপি, ও ভাইস চেয়ারম্যান আজিমুল হক বাবুল সিআইপি, ওমানে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত রিয়ার এডমিরাল খোন্দকার মিসবাহ-উল-আজিম, এনপিপি, এনডিইউ, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি এর সঙ্গে সোশ্যাল ক্লাবের পক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
সাক্ষাৎকালে আলাপচারিতায় উঠে আসে ওমানে বাংলাদেশ কমিউনিটির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়। যেহেতু সোশ্যাল ক্লাব ওমান সরকার কতৃক অনুমোদিত একটি প্রতিষ্ঠান সেহেতু কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে সার্বজনীন সোশ্যাল ক্লাব প্রতিষ্ঠা সকল প্রবাসীদের প্রাণের দাবী। তাই সোশ্যাল ক্লাব সার্বজনীন অবস্থান থেকে বিন্দু মাত্র পিছু আসার সুযোগ নাই।
ক্লাবের প্রতিনিধিরা প্রবাসীদের সুযোগ সুবিধা ও ওমানে বাংলাদেশ কমিউনিটির সামাজিক,সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন। ওমানে বাংলাদেশ কমিউনিটি সামাজিকতায় ও মানব কল্যাণে অতুলনীয়, বাংলাদেশ ও ওমান দুই দেশের সাংস্কৃতি বিকাশে ও ঐতিহ্য লালনে অনেক আগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে যা ওমানিদের সু দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে তবে কিছু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই সুনাম বিনষ্ট হচ্ছে ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশের ইমেজ।
আলাপকালে ক্লাবের প্রতিনিধিরা সোশ্যাল ক্লাবের আদর্শ, উদ্দেশ্য,বিভিন্ন কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের নজরে আনেন। সাথে সাথে ওমানে বসবাসরত প্রবাসীদের যে সকল সমস্যা তা তুলে ধরেন এবং এ সকল সমস্যা-নিরসনে দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন।
পাসপোর্ট ইস্যু এবং দূতাবাসের সকল সেবা কার্যক্রম সহজ করনের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া, সাত আট লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবায় নিয়োজিত দূতাবাস আরো বড় পরিসরে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ সব ধরনের সার্ভিস উপযোগী করে গড়ে তোলা, মহিলাদের আলাদা সার্ভিস ব্যবস্থা, টোকেন সিস্টেমে ভোগান্তি কমিয়ে আনা, এক্সপ্রেস সার্ভিস প্রদান সহ দীর্ঘদিনের সোশ্যাল ক্লাবের সব দাবি বেশির ভাগ পূরণ হয়েছে নব নিযুক্ত মান্যবর রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব নেওয়ার পর। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন চার সপ্তাহের মাথায় অনেক কিছু দৃশ্যমান। দূতাবাসের পরিধি বাড়াতে নতুন ভবন ভাড়া নেওয়ার অনুমোদন ও ঢাকা থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন। ইতিমধ্যে ঐ ভবনের ইন্টেরিয়র ডিজাইন এর কাজ চলছে। অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন ডোকুরেশনে সজ্জিত হবে এই নতুন দূতাবাস ভবন। তা সম্পাদন হলে দূতাবাসের সেবা নিতে কষ্ট লাঘব হবে ওমান প্রবাসীদের। তবে ভালো মানের একটা হল হলে আরও ভাল হয়।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীরা সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে দুবাই,কাতার ও সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে শতশত বাংলাদেশী সাজা প্রাপ্ত হন এবং অনেকেই কালো তালিকাভুক্ত হয়ে দেশে চলে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু মাসকাটে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের দূরদর্শিতায় মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের সহযোগিতায় কমিউনিটি নেতাদের সাথে নিয়ে সোশ্যাল ক্লাব তা নিয়ন্ত্রণ করে যার ফলে মাস্কাটে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শত শত ওমান প্রবাসী আন্দোলন এর প্রস্তুতি নিয়েও অগ্রসর হয়নি ও বিপদমুক্ত থাকে তারপরও সালালায় হাতে গুণা কিছু বাংলাদেশী সাজা ভোগ করে। তবে এখনও এর রেশ থেকে যায় অনেকে এটা নিয়ে অতিরিক্ত তর্ক বিতর্কে জড়ায় যা বিদেশের মাটিতে মোটেও মঙ্গলজনক নয়।
বলা বাহুল্য সোশ্যাল ক্লাব বাংলাদেশ দূতাবাসের সাথে সর্বদা সুসম্পর্ক রেখে এবং আমাদের সকলের অভিভাবক মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয় এর পরামর্শে কাজ করে থাকে। সাথে সাথে কমিউনিটির সকল নেতৃবৃন্দের সাথে এবং ওমানিদের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে কাজ করে যাচ্ছে এখানকার কমিউনিটির স্বার্থে, দেশের স্বার্থে এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে। সম্প্রতি ক্লাবের পরিধি বেড়েছে অনেক, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের শাখা ও উইংস । এবং এসব শাখা ও উইংস প্রতিনিয়ত তাদের নিজ নিজ অঞ্চলের ভাষা, কৃষ্টি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি প্রতিনিয়ত তুলে ধরছেন ওমানে। যার ফলে এসব কার্যক্রম ওমানিদের নজরে আসছে ইতিবাচক হিসেবে। তাই সার্বিক বিবেচনায় সবকিছু যাচাই-বাছাই করে ওমানের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওমানে বাংলাদেশ সোসাল ক্লাবকে শ্রেষ্ঠ ক্লাব হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ক্লাবের চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সাহেবকে শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে। যা ছিল সোশ্যাল ক্লাবের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। এই ধারাবাহিকতা এখনো চলমান।
গত কয়েক বছর আগে ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক দূতাবাসে একটি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশীরা রাজনৈতিক কর্মকান্ড এবং অনুমতি ছাড়া যাতে কোন অনুষ্ঠান না করে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করতে।তারই পরিপেপ্রেক্ষিতে ওমানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ কমিউনিটির সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয় যাতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং অনুমতি ছাড়া যাতে কোন প্রকার অনুষ্ঠান না করে। সে সময় হতে ওমানের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক অবস্থানে থাকে এবং যারা সতর্কবার্তার পরেও এই সব কর্মকান্ডে লিপ্ত তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করে অনেক কে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কৃত অপকর্মকে ঢাকা দেওয়ার জন্য অনেকে সোশ্যাল ক্লাবের উপর দোষ চাপাতে চেষ্টা করে। তবে তথ্য উপাত্ত ছাড়া এরকম অভিযোগ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও সোশ্যাল ক্লাব কোন প্রকার কার্যকর পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকে শুধুমাত্র বাংলাদেশিদের বিপদমুক্ত রাখার জন্য। সোশ্যাল ক্লাব চেষ্টা করে আমাদের কমিউনিটি যাতে অপরাধমুক্ত থাকে। ওমান এর আইনের প্রতি যাতে শ্রদ্ধাশীল হয়। দেশের ইমেজ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভালো কিছু করে। কমিউনিটির সেবায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা।
