
পিবিএন ডেস্ক, নয়াদিল্লি: ভারতের তিনটি রাজ্যে কোল্ডরিফ’ (Coldrif) নামের একটি কফ সিরাপ বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তামিলনাড়ুর ওষুধ কোম্পানি স্রেসান ফার্মা (Sresan Pharma) উৎপাদিত এই সিরাপ সেবনের পর অন্তত নয়জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ল্যাব পরীক্ষায় কোল্ডরিফ কফ সিরাপের নমুনায় ডাইইথিলিন গ্লাইকোল (DEG) নামের এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হয় এবং অল্প পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলেও প্রাণঘাতী হতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “নমুনাগুলোতে ডাইইথিলিন গ্লাইকোলের মাত্রা অনুমোদিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে।”
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব বলেন, “মধ্যপ্রদেশে এই সিরাপের বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্রেসান ফার্মার অন্যান্য পণ্য বিক্রিও স্থগিত করা হচ্ছে।”
স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, তামিলনাড়ু ও কেরালাও সিরাপটির বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অন্যদিকে, তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকার জনগণকে সতর্ক করতে কোল্ডরিফ সিরাপ নিয়ে জনসচেতনতা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বলে জানিয়েছে দ্য হিন্দু পত্রিকা।
ভারতের ওষুধ শিল্প নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন
এই ঘটনার পর ভারতের ওষুধ শিল্প আবারও আন্তর্জাতিক নজরদারির মুখে পড়েছে।
২০২২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাম্বিয়ায় ৭০ শিশুর মৃত্যুর জন্য ভারতের একটি কোম্পানির তৈরি কফ সিরাপকে দায়ী করেছিল। যদিও ভারত সে অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
এর পরের বছর উজবেকিস্তানেও ভারতীয় কফ সিরাপ সেবনে ১৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসে। এরপর ইরাকেও ভারতীয় ওষুধে **বিষাক্ত উপাদান পাওয়া যায়, যা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১০ মাসের মধ্যে পঞ্চম সতর্কবার্তা জারি করে।
সরকারি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (PIB) তথ্যমতে, ভারত বিশ্বের ২০ শতাংশ জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করে, যা মূল ওষুধের পেটেন্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সস্তা মূল্যে বাজারে আসে।
পরিমাণের দিক থেকে ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম।
২০১১ সালে Indian Journal of Pharmacology–এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্র্যান্ডেড ওষুধের তুলনায় জেনেরিক ওষুধ পাঁচ থেকে ছয় গুণ সস্তা হলেও মানের দিক থেকে তেমন পার্থক্য নেই।
ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দ্য হিন্দু, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB), ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।