
প্রবাস বাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশ দূতাবাস, লিবিয়া বর্ণাঢ্য আয়োজন ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের “চৈত্র সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২” উদ্যাপন করেছে। এ উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণকে বর্ণিল ব্যানার ও বৈশাখী কারুকাজে সজ্জিত করা হয়। দূতাবাস হতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, পিঠা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের আয়োজন এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। উৎসবে লিবিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণ ও তাঁদের পরিবারবর্গ বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। লিবিয়ায় নিযুক্ত মান্যবর রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার সস্ত্রীক অতিথিবর্গের সাথে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্রিপলীস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু পর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয় বাঙালির বৈশাখ বন্দনার জনপ্রিয় গান-‘এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো’ গানটির মাধ্যমে। এরপর শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে একক ও দলীয় সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, পুথিপাঠ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় ফ্যাশন শো-এর মাধ্যমে। বিশেষ আকর্ষণ ছিল শিশুদের পরিবেশিত ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাচ, যা উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানে বাঙালি, চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারোসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংগীতের সাথে তাদের পোশাক ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয়। ফলে দূতাবাসের প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে যেন এক খণ্ড বাংলাদেশ।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত তাঁর সমাপনী বক্তব্যের শুরুতে লিবিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকগণকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির মিলনের দিন, যা জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি, ভালোবাসা ও ঐক্যের বন্ধনকে দৃঢ় করে। রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এ বছর বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন হয়েছে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈচিত্র্যময়ভাবে, যেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ উৎসবের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। তিনি প্রবাসে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেন, এর মাধ্যমে বিদেশে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। রাষ্ট্রদূত নতুন বছরের শুভলগ্নে ২৪’এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ গঠনে দেশে ও প্রবাসে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে মান্যবর রাষ্ট্রদূত সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশগ্রহণকারীদের হাতে উপহার তুলে দেন। এরপর অনুষ্ঠিত হয় বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ “পিঠা উৎসব”। এতে প্রায় চল্লিশ পদের বাংলার গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পিঠা স্থান পায়। পরিশেষে দূতাবাসের পক্ষ থেকে উপস্থিত অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী ভোজের মাধ্যমে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। উপস্থিত প্রবাসীগণ বাংলা নববর্ষের বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য দূতাবাসের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।













